দেশবরেণ্য নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১২ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। তার মৃত্যুতে সাহিত্য ও বিনোদন জগতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, তা আজও অনুভব করেন অসংখ্য পাঠক, অনুরাগী, সাহিত্যপ্রেমী ও বিনোদনপ্রেমীরা।
বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে হুমায়ূন আহমেদ একটি অমর নাম। তার সৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আজও জীবন্ত—পাঠকের হৃদয়ে, স্মৃতিতে ও সাহিত্যের পাতায়। সাহিত্যের পাশাপাশি রঙিন পর্দায়ও তিনি রেখে গেছেন অমরত্বের ছাপ। উপহার দিয়েছেন একের পর এক কালজয়ী সৃষ্টি।
হুমায়ূন আহমেদ ১৯৪৮ সালের ১৩ নভেম্বর নেত্রকোণা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগে শিক্ষকতা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন হুুমায়ূন আহমেদ। তবে লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা আর চলচ্চিত্র নির্মাণের স্পৃহা তাকে শিক্ষকতা পেশা থেকে সরিয়ে নিয়ে আসে সৃজনশীল জগতে। ১৯৭২ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘নন্দিত নরকে’।
তার উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে মধ্যাহ্ন, জোছনা ও জননীর গল্প, দেয়াল, মাতাল হাওয়া, শঙ্খনীল কারাগার, শ্রাবণ মেঘের দিন, গল্প, কবি, লীলাবতী, গৌরীপুর জংশন, এইসব দিনরাত্রি ইত্যাদি। উপন্যাসে তিনি তৈরি করেছেন হিমু, মিসির আলী, শুভ্রের মতো কালজয়ী চরিত্র। এসব চরিত্র প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে অব্যাহতভাবে জনপ্রিয়।
টিভি নাট্যকার হিসেবেও হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন অনন্য। গত শতকের আশির দশকের মাঝামাঝি প্রচারিত তার লেখা ধারাবাহিক নাটক ‘এইসব দিনরাত্রি’ দিয়ে টিভি দর্শকের হৃদয় জয় করে নেন তিনি। নাটক ছাড়াও তিনি সিনেমা নির্মাণে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। তাঁর পরিচালিত সিনেমার মধ্যে ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘দুই দুয়ারী’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ এবং ‘ঘেঁটুপুত্র কমলা’ বিশেষভাবে প্রশংসিত।
তার অসামান্য সাহিত্যকীর্তি বাঙালি ও বাংলাদেশের সম্পদ। কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ১৯৯৪ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। এছাড়া তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৮১), হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৯০), লেখক শিবির পুরস্কার (১৯৭৩), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩ ও ১৯৯৪), বাচসাস পুরস্কার (১৯৮৮) লাভ করেন।
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গাজীপুরের নুহাশপল্লীতে দিনব্যাপী নানা আয়োজন করা হয়েছে। তার জন্মস্থান নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভক্ত-অনুরাগীরা স্মরণসভা, পাঠচক্র, প্রদর্শনী ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছেন।