সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মৌলভীবাজার-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, এবং সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে নগরে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ব্যানারে ঝটিকা মিছিলের পর বিকেলে এ হামলার ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন সূত্রে জানা গেছে, বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নগরের পাঠানটুলা এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসায় ৭০ থেকে ৮০টি মোটরসাইকেলে করে শতাধিক তরুণ-যুবক গিয়ে হামলা ও ভাঙচুর চালান। এ সময় হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে আসবাবপত্র ভাঙচুরের পাশাপাশি লুটপাট চালান। বাসাটিতে আনোয়ারুজ্জামানের পরিবারের কেউ থাকেন না। দুজন তত্ত্বাবধায়ক বাসার দেখাশোনা করেন। তাদের জিম্মি করে হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়।
পাশাপাশি শুভেচ্ছা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরীর বাসভবনের ‘ফ্ল্যাট অ্যাপার্টমেন্টের কার্যালয়’ এবং মেজরটিলা এলাকায় অবস্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিলেট সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রুহেল আহমদের বাসায় হামলা চালানো হয়। সন্ধ্যা ৭টায় শফিউল আলমের বাসায় হামলার সময় তার মা ও বোন বাসায় ছিলেন।
ঘটনার পর সরেজমিনে দেখা গেছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বাসার প্রায় সব কক্ষের আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবের কাচ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। অনেক আসবাবপত্র ওলটপালট অবস্থায় পড়ে আছে। আলমারি, চেয়ার-টেবিল, ফ্রিজ, এসিও, সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র থেকে জানা যায়, সকালে নগরের ধোপাদিঘীরপাড় এলাকায় ১৫-২০ জনের একটি দল ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল বের করেন। ব্যানারে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের ছবি ছিল এবং তার নামে স্লোগান দিতেও শোনা যায়। পরে এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ভিডিওটি আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড পেজেও আপলোড করা হয়েছে। ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। দুপুর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের খোঁজে মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে থাকেন। বিকাল ও সন্ধ্যায় সাবেক এমপি, মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় ছাত্রদলের কিছুসংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন।
সিলেট মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস বলেন, ‘এসব হামলা ও ভাঙচুর তাদের দলেরই কোনও কৌশলের অংশ। তাদের নিজ দলের নেতাকর্মীরা এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা ষড়যন্ত্র করছে তারা। বাসায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা তারই অংশ। হামলা-ভাঙচুরের সঙ্গে আমাদের দলের কোনও নেতাকর্মী জড়িত নন।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরপর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ওই তিন নেতার বিরুদ্ধে অসংখ্য মামলা হয়েছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, আনোয়ারুজ্জামান ৫ আগস্টের পরপর লন্ডন চলে যান। অন্যদিকে শফিউল আলম চৌধুরী ভারতের কলকাতায় রয়েছেন। এ ছাড়া রুহেলও দেশের বাইরে রয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় পাঠানটুলা এলাকায় সাবেক মেয়রের বাসায় এ হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এ সময় ভবনের ভেতরে গিয়ে জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। কিছু জিনিস বাইরে এনে তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ছাড়া বাসার পার্কিংয়ে থাকা মেয়রের গাড়িসহ একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছিল।
এ ব্যাপারে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (মিডিয়া) সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কে বা কারা হামলা-ভাঙচুর করেছে, তার তদন্ত করছে পুলিশ। যতটুকু জেনেছি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সকালে মিছিল করার জেরে এ হামলা-ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, ‘হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। শুনেছি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা এই হামলা চালিয়েছে।’