আজ সোমবার (২ জুন) বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) জাতির উদ্দেশে বাজেট উপস্থাপনায় তিনি এ কথা বলেন।
বাজেট বক্তৃতার যেসব পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, সেগুলোর দাম বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্ক-কর বৃদ্ধির প্রভাব বাজারে দ্রুত পড়ে, যদিও কর কমানোর প্রভাব তুলনামূলকভাবে দেরিতে আসে।
যেসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে:
টেবিলওয়্যার
বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত প্লাস্টিকের তৈরি টেবিলওয়্যার, কিচেনওয়্যার, গৃহস্থালি সামগ্রী, হাইজেনিক ও টয়লেটসামগ্রী উৎপাদনে ভ্যাট সাড়ে ৭ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এতে এসব পণ্যের দাম বাড়বে।
দেশে তৈরি সুতা
দেশীয় টেক্সটাইল মিলে উৎপাদিত সুতার ভ্যাট বাড়ানো হচ্ছে। প্রতি কেজি কটন সুতা ও মেন মেইড ফাইবারে তৈরি সুতার সুনির্দিষ্ট কর তিন টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা করা হচ্ছে। এতে দেশীয় সুতায় তৈরি গামছা, লুঙ্গিসহ পোশাকের দাম বাড়তে পারে।
হেলিকপ্টার
নতুন অর্থবছরে হেলিকপ্টার আমদানিতে ১০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বসানো হতে পারে। তাতে হেলিকপ্টার আমদানির খরচ বাড়বে। এর আগে হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক ছিল না।
মুঠোফোন:
দেশে উৎপাদন ও সংযোজন খাতে ভ্যাট অব্যাহতি সুবিধা কিছুটা কমানো হয়েছে। এর ফলে মোবাইল ফোনের দাম বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ইলেকট্রিক হোম অ্যাপ্লায়েন্স:
ওয়াশিং মেশিন, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ব্লেন্ডার, জুসার, আয়রন, রাইস কুকার, প্রেসার কুকার প্রভৃতি পণ্যের ওপর ভ্যাট সুবিধা আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে।
প্লাস্টিকের তৈজসপত্র:
থালাবাসনসহ ঘরোয়া ব্যবহারের প্লাস্টিক সামগ্রীর ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ হয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্রে ভ্যাট ছাড় বহাল রয়েছে।
এলপিজি সিলিন্ডার:
স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এলপিজি সিলিন্ডারের ওপর ভ্যাট ছাড়ের পরিমাণ কমিয়ে মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এতে সিলিন্ডারের দাম কিছুটা বাড়তে পারে।
বিদেশি চকলেট:
বিদেশি চকলেটের শুল্কায়ন মূল্য বাড়িয়ে ইউনিটপ্রতি ৪ ডলার থেকে ১০ ডলার করা হয়েছে, যার ফলে আমদানি ব্যয় বাড়বে।
লিপস্টিক ও প্রসাধনী:
ঠোঁট, চোখ ও মুখের প্রসাধন পণ্যের ওপর শুল্কায়ন মূল্য অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। ফলে বাজারে এসব কসমেটিকসের দামও বাড়তে পারে।
ব্লেড:
দেশীয়ভাবে উৎপাদিত ব্লেডের ওপর ভ্যাট ২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে দাঁড়ি কাটার খরচও বাড়বে।
অর্থ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া এবং রাজস্ব আদায় বাড়ানোই এসব শুল্ক-কর বৃদ্ধির মূল উদ্দেশ্য। তবে ভোক্তারা এতে কিছুটা চাপের মুখে পড়বেন বলেও মন্তব্য করছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
রড ও স্টিলে ভ্যাট বৃদ্ধি
নির্মাণ শিল্পের রডের আমদানিতে ভ্যাট ২০-২৩ শতাংশ এবং উৎপাদনে ২০ শতাংশ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। শুল্ক বাড়ালে রডের দাম প্রতি টনে প্রায় ১ হাজার ৪০০ টাকা বাড়তে পারে। বিদ্যমান ফিক্সড আমদানি শুল্ক বাতিল হতে পারে।
পরিচালন ও উন্নয়ন খাতে ২৩২ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন
বর্তমানে স্টিলের মূল কাঁচামাল স্ক্র্যাপ আমদানিতে প্রতি টনে ফিক্সড শুল্ক আদায় করা হয় ১ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে স্টিল থেকে বিলেট ও রড উৎপাদনে প্রতি টনে ফিক্সড ভ্যাট ২ হাজার ২০০ টাকা। সবমিলিয়ে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট মিলিয়ে সরকার প্রতি টনে পাচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা।
এসি-ফ্রিজে ভ্যাট বাড়ছে
মাত্র ছয় মাস আগে কর্পোরেট কর দ্বিগুণের পর এবার ফ্রিজ ও এয়ার কন্ডিশনারে ভ্যাট সাড়ে সাত শতাংশ থেকে পনেরো শতাংশ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এতে দেশীয় উৎপাদনকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জ বাড়তে পারে।
মোটরসাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ
গত বাজেটে মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন যন্ত্রাংশ আমদানিতে ৩ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছিল, কিন্তু দাম কমেনি। আগামী বাজেটে শুল্ক-ভ্যাট বাড়ানোর সম্ভাবনা আছে। দেশে ২০১৮ সালের পর ১০টির বেশি মোটরসাইকেল কারখানা স্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে হোন্ডা, ইয়ামাহা, সুজুকি ও স্থানীয় রানার।
সিগারেট
গত জানুয়ারিতে সিগারেটের চারটি স্তরে দাম ও শুল্ক দুটোই বাড়ানো হয়েছিল। আদেশে নিম্ন, মধ্যম ও উচ্চ স্তরে ১০ শলাকা প্রতি সিগারেটে সম্পূরক শুল্ক ৫ থেকে ৭ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছিল। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে এ বিষয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে না। তবে তামাক শিল্পে ব্যবহৃত সিগারেট পেপারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করার প্রস্তাব আসছে বাজেটে। সেক্ষেত্রে আরেক দফায় দামে প্রভাব পড়তে পারে।
ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারিতে বাড়তি শুল্ক
ঢাকাসহ সারা দেশে বিপদজ্জনক বাহনের নাম ব্যাটারিচালিত রিকশা। অনিয়ন্ত্রিত পরিবহন ব্যাটারিচালিত রিকশার দাম বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই রিকশার ১২০০ ওয়াটের ডিসি মোটরের কাস্টমস শুল্ক ১ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
কসমেটিক্স পণ্যে বাড়তি খরচ
নারীদের সৌন্দর্য সামগ্রীর আমদানিতে ন্যূনতম মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। লিপস্টিক প্রতি কেজির শুল্কায়নের ন্যূনতম মূল্য ২০ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪০ ডলার করা হতে পারে। অন্যান্য কসমেটিক্সের ক্ষেত্রেও ন্যূনতম মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাব আছে।
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যে ভ্যাট দ্বিগুণ
ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের ওপর ভ্যাট দ্বিগুণ করে ১৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা আছে। এতে চা-কফি কাপ, প্লেট, বাটি ইত্যাদির দাম বাড়তে পারে। তবে পরিবেশবান্ধব বিকল্প পণ্যে ভ্যাট থাকবে না, পরিবেশ সুরক্ষার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।