এ সময় ভুয়া পুলিশ সদস্যদের কাছ থেকে দুইটি ডিএমপি ও ডিবি পুলিশে পোশাক, দুইটি হ্যান্ডকাফ, দুইটি ডেমো শর্টগান ও একটি ডেমো পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার এসব তথ্য জানান।
এর আগে বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভূয়া পুলিশ পরিচয়দানকারীদের শহরের জলিল চত্বর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া একইদিন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় নওগাঁ সদর উপজেলার চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া উত্তরপাড়া এলাকা থেকে ওই দুই যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির সময় গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নওগাঁ শহরের মাষ্টারপাড়া এলাকার মৃত নূর ইসলামের ছেলে আরিফ (২৯) এবং শহরের মাদার মোল্লা বলিরঘাট এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে ফরহাদ হোসেন ওরফে শোভন (২৯)।
ভুয়া পুলিশ পরিচয়দানকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে পুলিশ সুপারমোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে জলিল চত্বর চেকপোস্টে বগুড়া থেকে রাজশাহী অভিমূখী একটি মাইক্রোবাসে তল্লাশি চালানো হয়। তল্লাশি করলে মাইক্রোবাসে থাকা ব্যক্তিদের কাছ থেকে একটি ডেমো পিস্তল, দুইটি শর্টগান, দুইটি হ্যান্ডকাফ এবং ডিএমপি এবং ডিবি পুলিশের পোশাক পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা মান্দা থানার গোবিন্দপুর এলাকায় শুটিংয়ের জন্য যাচ্ছেন বলে পুলিশকে জানায়। কিন্তু তারা কোথায় থাকবেন, কী শুটিং করবেন এসব প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেন না। পরবর্তীতে তাদের মোবাইল তল্লাশি করলে একটি জিডির কপি পাওয়া যায়।
সোহেল রানাসহ তার বাবা-মা এর নামে তারা ঢাকার সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেছেন। সেই মামলার তদন্ত করার জন্য আদালত পিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছেন।
ওই মামালায় সোহেল রানা এবং তার পিতামাতাকে পুলিশের পোশাক এবং শর্টগান নিয়ে অপহরণ করার উদ্দেশ্যে তার বাড়িতে যাচ্ছিলেন। গ্রেপ্তারকৃতরা পুলিশের ইউনিফর্ম ব্যবহার করে পুলিশ পরিচয়ে কোন অপকর্ম ও চাঁদাবাজি করছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তাদের চারজনের নামে নওগাঁ সদর থানায় অপহরণের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এদিকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাফিউল সারোয়ার বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে লাইভস্টক ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরত এক নারী স্টাফের কাছে গিয়ে দুই যুবক নিজেদেরকে গণঅধিকার পরিষদের নেতা পরিচয় দেন।
সামনাসামনি দেখা করলে গণঅধিকার পরিষদের পরিচয় দেওয়া ওই দুই নেতা জানায় ২০২২ সালে লিটন ব্রিজের নিচে চায়ের দোকানে রাজনৈতিক কারণে গ্রেপ্তার আরিফের বাবাকে মারধরের ঘটনায় সে থানায় একটি মামলা দায়ের করবে।
তাকে চাঁদা না দিলে সে মামলায় আসামি হিসেবে ওই নারী স্টাফের নাম সংযুক্ত করবে এবং তার চাকরির ক্ষতি করবে মর্মে তার কাছ থেকে ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার ওই টাকা দিয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের ঠিকাদারির লাইসেন্স করবেন বলেও তাদেরকে জানায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, তাদের মধ্যে আলোচনার এক পর্যায়ে তাদেরকে ৭০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হবে। গতকাল চাঁদার ৭০ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য চন্ডিপুর ইউনিয়নের শিমুলিয়া উত্তরপাড়া এলাকায় গেলে ওই নারী স্টাফের চাচাতো ভাই তাদেরকে ১০ হাজার টাকা দেন। চাঁদার বাকি টাকা না পাওয়ায় তাদের মাঝে কথা কাটাকাটির শুরু হয়।
বিষয়টি জনাতে পেরে ঘটনাস্থলে গেলে পুলিশের সামনে ওই দুই যুবক চাঁদাবাজির কথা স্বীকার করে। পুলিশ তখন তাদের আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ওই নারী স্টাফ তাদের নামে থানায় চাঁদাবাজির মামালা দায়ের করলে তাদেরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।