বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গুজব অনেকটা কমেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রীসহ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সেলিম মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জয়, পুতুল ও ববিসহ ৮ জনের নামে মামলার অনুমোদন পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭৪৮ জন ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু ঢাকা জেলার আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সসমূহ ২০২৬ সালের জন্য নবায়নের সময় নির্ধারণ ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া প্রকাশ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলো ডিএমপি নিউজার্সির প্রথম নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন শেরিল ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর হয়ে ইতিহাস গড়লেন অ্যাবিগেল

হত্যাকারীদের বিচার না হলে শহিদদের আত্মা শান্তি পাবে না, শহিদ শাওনের পিতা

নিউজ ডেস্ক | মেট্রোটাইমসটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট : শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ৬:৩৬ অপরাহ্ন
শহিদ ইউনুছ আলী শাওনের ছবি হাতে বৃদ্ধ বাবা আবুল বাসার ছবি : বাসস

গত বছরের ২০ জুলাই। পুরো যাত্রাবাড়ি ও শনির আখড়া এলাকার সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছিলো ছাত্র-জনতা

কোনভাবেই তাদের আন্দোলন থেকে সরাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ওইদিন বিকেলে দোকান থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামেন ইউনুছ আলী শাওন। তখনই ছাত্র-জনতার ওপর হেলিকপ্টার থেকে র‌্যাবের এলোপাথাড়ি ছোঁড়া দুটি গুলি শাওনের বুকে বিদ্ধ হয়। শহিদ হন তিনি।

শহিদ ইউনুছ আলী শাওন (১৯) লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ মাগুড়ী গ্রামের কাজী বাড়ির হতদরিদ্র আবুল বাসারের ছেলে। তিনি ঢাকার শনির আখড়ার এক আত্মীয়ের কসমেটিকস দোকানের কর্মচারি ছিলেন। শাওনের গুলিবিদ্ধ নিথর দেহ হাসপাতালের ২২টি লাশের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়। সম্প্রতি সরেজমিনে শাওনের বাড়িতে গেলে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার বৃদ্ধ বাবা আবুল বাসার।

এ সময় তিনি বাসসকে বলেন, প্রথম স্ত্রী মারা যাবার পর কুলসুম বেগমকে বিয়ে করেন তিনি। এই সংসারে ইউনুছ আলী শাওন তার একমাত্র সন্তান। প্রথম সংসারে দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। আগের সংসারের বড় ছেলে ওমর ফারুক (৪০) শ্রমিকের কাজ করে। দ্বিতীয় ছেলে কামরুল হোসেন (৩৫) প্রতিবন্ধি ও মেয়ে শিউলী বেগম(৩০) কে বিয়ে দিয়েছেন।

ইউনুছ আলী শাওন ও প্রতিবন্ধি ছেলে কামরুল হোসেন এবং স্ত্রী কুলসুম বেগমকে নিয়ে তার সংসার। বড় ছেলে ওমর ফারুক বিয়ে করে অন্যত্র বসবাস করছেন।

অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরেছিলেন দ্বিতীয় সংসারের ছেলে ইউনুছ আলী শাওন। মাস শেষে যে বেতন পেতেন তা দিয়ে চলতো তাদের সংসার। শাওন ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।

শাওনের পিতা বলেন, কিভাবে ছেলেকে ভুলব? সারাক্ষণ অনেক স্মৃতি সামনে এসে পড়ে। তাই যখন মনে পড়ে তখনই শাওনের ছবিগুলো দেখি। এর মাধ্যমে খুঁজে পাই তাকে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে পাখির মতো অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে হত্যা করছে। তাদের প্রত্যেকের বিচার না হলে শাওনসহ অন্য শহিদের আত্মা শান্তি পাবে না। দ্রুত তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।

জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দুই লাখ ও সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান পাওয়ার কথা জানিয়ে শাওনের পিতা বলেন, এর বাইরে জেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন স্থান থেকে আরো কিছু সহযোগিতা পেয়েছি।

তিনি বলেন, ছেলেকে হারিয়েছি। কষ্ট থাকলেও দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু অনেক তাজা রক্তের বিনিময়ে।

শহিদ ও আহতেরা যেন সম্মান ও যথাযথ মর্যাদা পায় সে দাবি করেন তিনি।

ওই সময় কথা হয় প্রতিবেশী ও সংবাদকর্মী মো. রফিকুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, শনির আখড়ার একটি কসমেটিকস দোকানে পাঁচ হাজার টাকা বেতনে ইউনুছ আলী শাওন চাকুরি করতো। সে টাকা দিয়ে চলতো সংসার। কিন্তু সরকার পতনের আন্দোলনে হেলিকপ্টার থেকে র‌্যাবের ছোঁড়া গুলিতে শহিদ হন শাওন। তার বুকের দু’পাশে দুটি গুলি লাগে।

পরিবারটি নিরীহ ও খুবই অসহায়। শুধু শাওনই নয়, অনেক শহিদ পরিবারই নি:স্ব। তাদের পাশে সরকারকে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।

চন্দ্রগঞ্জ থানা বিএনপির সদস্য সচিব আনোয়ার হোসেন বাচ্চু বলেন, সরকার পতনের আন্দোলনে লক্ষ্মীপুরে যে ১৬ জন জীবন দিয়েছে, সেসব শহিদ পরিবারের পাশে বিএনপি দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতেও তাদের পাশে থাকবে।

জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার জানান, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন, তাদের অনেকের বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সাথে কথা বলেছেন তিনি।

এছাড়া প্রত্যেক পরিবারের পাশে জেলা প্রশাসন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জেলায় ১৬ জন শহিদ হয়েছে। এছাড়া আহত ২৫৯ জনের তালিকা করা হয়েছে। পাশাপাশি শহিদ ও আহতদের পরিবারের নিরাপত্তায় কাজ করছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন। প্রশাসন সব সময়ে তাদের পাশে রয়েছে।

এদিকে লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহিদ উদ্দিন এ্যানী বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা শহিদ বা আহত হয়েছেন, বিএনপি তাদের পাশে রয়েছে। তাদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে সব বিষয়ে যথাযথ মূল্যায়ন করা হবে। এটিই বিএনপির অঙ্গিকার। কোন হত্যাকারী ছাড় পাবে না। প্রত্যেকের বিচার হবেই হবে। কেউ ছাড় পাবে না।-বাসস


এই ক্যাটাগরির আরও সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর