প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যামাজন বিশ্বব্যাপী তাদের করপোরেট বিভাগে প্রায় ১৪ হাজার কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে আরও ‘সংগঠিত ও দক্ষভাবে’ পরিচালনা করতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে কোম্পানিটি।
আজ মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যামাজন জানায়, এই ছাঁটাই তাদের বৈশ্বিক করপোরেট কর্মীবাহিনীর ওপর প্রভাব ফেলবে। এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল, প্রতিষ্ঠানটি ৩০ হাজার পর্যন্ত কর্মী ছাঁটাই করতে পারে।
অ্যামাজনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট বেথ গ্যালেটি এক নোটে কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘এই পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা আরও শক্তিশালী হব। আমাদের লক্ষ্য হলো সেইসব খাতে বিনিয়োগ করা, যা গ্রাহকদের বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত।’
তিনি স্বীকার করেন, কোম্পানির ভালো আর্থিক অবস্থার মধ্যেই এমন সিদ্ধান্তে অনেকে প্রশ্ন তুলতে পারেন। গত জুলাই মাসে প্রকাশিত ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে অ্যামাজনের বিক্রি আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেড়ে ১৬৭ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়, যা ওয়াল স্ট্রিটের প্রত্যাশাকেও ছাড়িয়ে গিয়েছিল।
তবুও গ্যালেটি জানান, এই ছাঁটাই প্রয়োজন, কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ‘ইন্টারনেটের পর সবচেয়ে রূপান্তরক প্রযুক্তি’, যা কোম্পানিগুলোকে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত উদ্ভাবনে সাহায্য করছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি আমাদের আরও সরল কাঠামো দরকার—কম স্তর, বেশি দায়িত্ব—যাতে আমরা দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং গ্রাহকদের আরও ভালোভাবে সেবা দিতে পারি।’
প্রভাবিত কর্মীদের সহায়তা দিতে কোম্পানি পুনর্বিন্যাস প্রক্রিয়ায় সহযোগিতা করবে বলে জানানো হয়েছে। যারা নতুন পদে যেতে পারবেন না, তাদের জন্য থাকবে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য সহায়তা।
অ্যামাজনের বিশ্বব্যাপী কর্মী সংখ্যা বর্তমানে ১৫ লাখেরও বেশি, যার মধ্যে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার করপোরেট কর্মী। করোনা মহামারির সময় অনলাইন কেনাকাটার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কোম্পানিটি ব্যাপক হারে কর্মী নিয়োগ করেছিল।
তবে এখন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী অ্যান্ডি জ্যাসি ব্যয় কমানোর নীতি অনুসরণ করছেন। তিনি আগেই সতর্ক করেছিলেন, এআই প্রযুক্তির কারণে কিছু কাজের ক্ষেত্রে কর্মী কমানোর প্রয়োজন হতে পারে। তার ভাষায়, ‘কিছু কাজ কম লোকের দ্বারা সম্পন্ন হবে, আবার কিছু নতুন ধরনের কাজ তৈরি হবে।’
২০২২ সালেও অ্যামাজন প্রায় ২৭ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছিল—মহামারির পর অতিরিক্ত নিয়োগ ফিরিয়ে আনার অংশ হিসেবে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্লাউড ব্যবসা এবং এআই বিনিয়োগে ধীরগতি থাকায় অ্যামাজন এখন কার্যকারিতা বাড়ানোর দিকে জোর দিচ্ছে। কুইলটার চেভিয়টের প্রযুক্তি বিশ্লেষক বেন ব্যারিঞ্জার বলেন, ‘এআইয়ের অগ্রগতির কারণে সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্টসহ নানা ক্ষেত্রে চাকরি হারানো এখন অনিবার্য। বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মী পুনর্গঠন করছে, কারণ এআই তাদের সেই সুযোগ দিচ্ছে।’
অ্যামাজন চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ত্রৈমাসিক ফলাফল আগামী বৃহস্পতিবার প্রকাশ করবে। সূত্র: বিবিসি