বৃহস্পতিবার রাতভর ইউক্রেন রাশিয়ার ভূখণ্ডে ২২১টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশই ভূপাতিত করা হয়েছে। মে মাসের পর এটিই অন্যতম বড় আকাশপথের হামলা বলে দাবি করছে মস্কো।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, বেশিরভাগ ড্রোন ব্রায়ানস্ক ও স্মোলেনস্ক অঞ্চলে গুলি করে নামানো হয়। সেখানে লুকঅয়েল কোম্পানির স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। লেনিনগ্রাদ অঞ্চলে ২৮টি ড্রোন ধ্বংস করা হয়। প্রিমোর্স্ক বন্দর এলাকায় একটি জাহাজে আগুন লাগে, তবে হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অন্যদিকে, ইউক্রেনের সীমান্তবর্তী সুমি অঞ্চলে রাশিয়ার এক বোমা হামলায় দুই বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
রাশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোন প্রতিহত করার ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে মস্কো, কালুগা ও নভগোরদ অঞ্চলও রয়েছে। মস্কো শহরের কাছাকাছি ৯টি ড্রোন ভূপাতিত হয়। ব্রায়ানস্কে একটি বাসে ড্রোন হামলায় ৭ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আঞ্চলিক গভর্নর আলেকজান্ডার বোগোমাজ।
রাশিয়ার দাবি অনুযায়ী, এই হামলা ছিল গত চার মাসের মধ্যে অন্যতম বড় আকাশ হামলা। এর আগে ৭ মে তারা রেকর্ড ৫২৪টি ড্রোন ধ্বংস করেছিল। তবে ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে রাশিয়া তাদের ভূখণ্ডে ৮১৮টি ড্রোন ব্যবহার করেছে।
এই হামলায় সেন্ট পিটার্সবার্গের পুলকোভো বিমানবন্দরের কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়। রাশিয়ার পূর্ণাঙ্গ আগ্রাসনের পর লেনিনগ্রাদ অঞ্চলে এটিকে অন্যতম বড় আক্রমণ বলা হচ্ছে।
গত কয়েক মাসে ইউক্রেন রাশিয়ার ভেতরে জ্বালানি শোধনাগার, তেলভান্ডার ও লজিস্টিকস হাবকে নিশানা করে হামলা বাড়িয়েছে। আগস্টে অন্তত এক ডজন শোধনাগার আক্রান্ত হয়, যা রাশিয়ার ২০ শতাংশ তেল শোধন সক্ষমতা অচল করে দিয়েছে বলে দাবি করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে রুশ গণমাধ্যম এগুলোকে “অপরিকল্পিত মেরামত” হিসেবে দেখাচ্ছে।
এই হামলার কারণে রাশিয়ার পূর্বাঞ্চলে জ্বালানি সংকট দেখা দিয়েছে। পাম্পে দীর্ঘ লাইন, রেশনিং ও দাম বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়া দ্রুজবা পাইপলাইনেও হামলা হয়েছে, যা হাঙ্গেরি ও স্লোভাকিয়ায় রপ্তানি ব্যাহত করেছে।
রাশিয়াও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইউক্রেনের শহর ও জ্বালানি স্থাপনায়। এদিকে, শান্তি আলোচনা স্থগিত হয়ে আছে বলে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন। তিনি ইউক্রেনের ইউরোপীয় মিত্রদের দোষারোপ করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতের এই হামলার পর শুক্রবার রাশিয়া ও বেলারুশের যৌথ সামরিক মহড়া শুরু হয়েছে। চার বছর অন্তর অনুষ্ঠিত এই মহড়ার আগে পোল্যান্ডের আকাশসীমায় রুশ ড্রোন ঢুকে পড়ার ঘটনাকে “অভূতপূর্ব অনুপ্রবেশ” হিসেবে বর্ণনা করেছে ওয়ারশ।