নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিকগন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির মহাসচিব ইমরান হাসান বলেন, সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কোনরকম নোটিশ , আলোচনা ছাড়াই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ‘একতরফা’ নকশাবহির্ভূত রেস্তোরাঁগুলোর ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
আমরা অবিলম্বে এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আবেদন করছি। অন্যথায় দেশের সব রেস্তোরাঁ মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দিচ্ছি। প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ, মানববন্ধন ও দেশব্যাপী রেস্তোরাঁ বন্ধের মতো কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবো।
ইমরান বলেন, দিনেরপর দিন একটা সেক্টরকে টার্গেট করে অন্যায় অবিচার আর মেনে নেয়া যায়না।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সভাপতি ওসমান গনি ও মহাসচিব ইমরান হাসানের সই করা একটি বিবৃতি দিয়েছে ।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৮ এপ্রিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে গণমাধ্যমে একটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়, যেখানে, নকশা-বহির্ভূত সব রেস্তোরাঁর ট্রেড লাইসেন্স বাতিল করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বর্তমানে একজন রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীকে ব্যবসা শুরু করতে হলে ১৪টি সংস্থার অনুমতি লাগে। এতগুলো সনদ নিতে গিয়ে উদ্যোক্তাদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। তার পরেও অনেক তরুণ উদ্যোক্তা এখন রেস্তোরাঁ ব্যবসায় মনোযোগী হচ্ছেন। তাতে দিন দিন বড় হচ্ছে এ ব্যবসার পরিধি। বছরে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের মতো।
রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির মতে, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে রেস্তোরাঁ রয়েছে ৪ লাখ ৮১ হাজারের বেশি। এ শিল্পে কর্মরত ৩০ লাখের বেশি শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষ এ খাতের ওপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশের রেস্তোরাঁ শিল্পে আয় ৪ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। ২ লাখ কোটি টাকার মতো বিনিয়োগ রয়েছে এ খাতে। ভবিষ্যতে দেশের তিন ভাগের এক ভাগ মানুষকে রেস্তোরাঁর খাবারের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে। রেস্তোরাঁ খাত আজ দেশের অন্যতম বৃহত্তম বেসরকারি কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী খাত। কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং লাখো মানুষের জীবিকা সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। কোনও ধরনের আগাম নোটিশ, আলোচনা বা যৌক্তিক সময়সীমা না দিয়ে, হঠাৎ ট্রেড লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বিবেচনাহীন, অমানবিক, ব্যবসাবিরোধী ও দেশবিরোধী।
বিবৃতিতে বলা হয়, বহু বছর ধরে আমরা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। আমাদের এই সেক্টর অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং পর্যটন শিল্পে বিশাল অবদান রেখেছে। অনেক রেস্তোরাঁ মালিক ব্যাংক ঋণ নিয়ে ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছেন। এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত তাদের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। রেস্তোরাঁ মালিকরা জায়গার লিজ ও রিনোভেশনে যে বিনিয়োগ করেছেন, তা পরিশোধের আগেই আমাদের ব্যবসা বন্ধের মুখে পড়েছে— যা আমাদের জন্য চরম আর্থিক ক্ষতির কারণ হবে। অথচ ডিএসসিসি এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে হাজারো ব্যবসায়ীর পরিবারকে পথে বসানোর আয়োজন করেছে। প্রশাসনের এই বেআইনি ও একপাক্ষিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ধ্বংস হবে, কর্মসংস্থানের মারাত্মক সংকট তৈরি হবে এবং রাজধানীর ভোক্তাসেবার একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত অচল হয়ে পড়বে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক মো: শাহজাহান মিয়া বলেন, প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়ে এই লাইসেন্সগুলো দেয়া হয়নি। কিছু অসৎ কর্মচারীকে ভুল বুঝিয়ে এগুলো নেয়া হয়েছে। মূলত, এই কারণেই লাইসেন্সগুলো বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সিটি করপোরেশন বলছে রেঁস্তোরা বন্ধ করতে মালিকদের কোনো সময় দেয়ার সুযোগ নেই। যে কোনো সময় অভিযানে নামবে কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন প্রশাসক মো: শাহজাহান মিয়া আরও বলেন, লাইসেন্স বাতিলের পর রেস্তোরাঁগুলো নিজস্ব উদ্যোগে এগুলো সরিয়ে নেবে। যারা পূর্বে দায়িত্বে ছিলেন, তারা যদি যথাযথভাবে বিষয়গুলো মনিটর করতেন, তাহলে এই সংখ্যা এতো বড় হতো না।