২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে মার্কিন ব্যবসায়ীদের অংশীদার হিসেবে পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আজ সোমবার (২৭ মে) সকালে গণভবনে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের এক সভায় তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি ‘স্মার্ট নেশন’ হয়ে উঠতে আকাঙ্খা পোষণ করি। আমাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা বাড়াতে এবং রপ্তানির ভিত্তি সম্প্রসারণে আপনাদের সমর্থন প্রয়োজন।’বাংলাদেশ ২০২৬ সালে ‘স্বল্পোন্নত’ থেকে ‘উন্নয়নশীল’ দেশে পরিণত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী ‘আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃত। এটা সম্ভব হয়েছে সুশাসন, আইনের শাসন ও স্থিতিশীলতা, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগ, নারীর ক্ষমতায়ন, এবং আইসিটি, যা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ রুপান্তর ঘটিয়েছে।
তিনি উল্লেখ করেন, কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি প্রধান অর্থনৈতিক ও উন্নয়ন সহযোগী। উভয় দেশের অনেক ক্ষেত্রেই নিবিড় সম্পৃক্ততা রয়েছে, বিশেষ করে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের যৌথ লক্ষ্য হল জনগণের জন্য পারস্পরিক সুবিধা এবং সমৃদ্ধি অর্জন করা। এটি আমাদের ক্রমবর্ধমান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এবং জনগণের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ায় প্রকাশ পেয়েছে।’মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে আমাদের রপ্তানির বৃহত্তম একক-দেশীয় গন্তব্য, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগের বৃহত্তম এবং জ্ঞান ও প্রযুক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ তিনি বলেন, আগামী দিনে এই অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততা আরও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদী।
তিনি বলেন, আমি আপনাদেরকে আমাদের অনেক প্রাণবন্ত এবং উচ্চ-সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র যেমন নবায়নযোগ্য জ¦ালানী, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইলস, ফার্মাসিউটিক্যালস, হালকা ও ভারী যন্ত্রপাতি, রাসায়নিক সার, আইসিটি, সামুদ্রিক সম্পদ আহরণএবং চিকিৎসা সরঞ্জাম প্রভৃতি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি’।
শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আমাদের দুই বন্ধু প্রতীম দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতার অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।তিনি সকল মার্কিন ব্যবসায়ী নেতাদের বাংলাদেশে ব্যবসার সুযোগ নিতে এবং বিনিয়োগের অনুরোধ জানান।’
তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশে ১শ’টি ‘বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ (এসইজেড) এবং ২৮টি হাই-টেক পার্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি চালু রয়েছে। বিশেষকরে আইটি সেক্টরে, ১০ লাখেরও বেশি ফ্রি-ল্যান্সিং আইটি পেশাদারসহ, বাংলাদেশ আইটি খাতে বিনিয়োগের জন্য সঠিক গন্তব্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিযোগিতামূলক মজুরিতে একটি তরুণ, দক্ষ এবং প্রাণবন্ত কর্মশক্তির প্রাপ্যতা একটি বিশাল সুবিধা।
তিনি বলেন, ‘এখানে, আমি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই বাংলাদেশে এই অঞ্চলের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ নীতির মর্যাদা রয়েছে। তিনি আরো বলেন নিশ্চিত থাকুন আমরা আমাদের বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছি।’
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য লেখক এম. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী মার্কিন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদলকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে অবহিত করেছেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে নারীর ক্ষমতায়নে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ দেশ এবং বিশ্বব্যাপী নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে রেটিং দিয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ১৭ কোটি মানুষের বাজার এবং এর অবস্থান (ভৌগলিক) এটিকে ৩ বিলিয়ন মানুষের বাজারের কেন্দ্রস্থলে পরিণত করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে এর বর্ধিত সংযোগ এটিকে এই অঞ্চল এবং এর বাইরে বিনিয়োগ এবং বাণিজ্যের জন্য একটি আদর্শ জায়গা করে তুলেছে।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমাদের ফোকাস এখন শুধু আঞ্চলিক নয়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বৈশ্বিক অংশীদারদের সাথেও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নত করা।’
গত ১৫ বছরে বেশ কয়েকটি মেগা-অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কয়েকটির নাম বলতে গেলে, পদ্মা নদীর ওপর সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল, এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকায় একটি আধুনিক আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর, বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইত্যাদি। আইনি ও আর্থিক অবকাঠামোও উন্নত করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এইগুলো আমাদের অভ্যন্তরীণ এবং আঞ্চলিক সংযোগ বাড়িয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির একটি।
তিনি আরো বলেন, ‘এটি এখন ৩৫ তম বৃহত্তম অর্থনীতি, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫ তম হবে বলে অনুমান করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি একটি প্রাণবন্ত বেসরকারি খাতের কারণে যেখানে মার্কিন ব্যবসায়ীদের একটি উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ অনেক আর্থ-সামাজিক সূচকে দক্ষিণ এশিয়ায় নেতৃত্ব দেয়।
তিনি বলেন, ‘পরিকল্পিত উন্নয়ন প্রচেষ্টার কারণে দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালে থাকা ৪১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ১৮ দমমিক ৭ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ৫ দশমিক ৮ শতাংশে নেমে এসেছে। গত এক দশকে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হয়েছে।’
আরও চমকপ্রদ তথ্য হলো- প্রত্যাশিত গড় আয়ু যা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর ছিল ৪৬ দশমিক ৬ বছর তা বর্তমানে বেড়ে ৭৩ দশমিক ৪ বছরে উন্নীত হয়েছে। এখন প্রায় সব শিশু প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করছে। উল্লেখযোগ্যভাবে, নারী সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ২৫ শতাংশ যা দক্ষিণ এশিয়ার গড় ৬৫ শতাংশের চেয়ে বেশি।’
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর তার ব্যক্তিগত উদ্যোগের কারণে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগ বহুগুণ বেড়েছে।
নজরুল ইসলাম বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার বিষয়ে খুবই আগ্রহ প্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে তারা কিছু জটিলতার কথা উল্লেখ করে সেগুলো সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান স্টিভেন কোবোস, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট অতুল কেশপ।
অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু, অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন।
সঞ্চালনায় ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।