বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:১৪ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
শিরোনাম :
সাংবাদিকরা সত্য তুলে ধরায় পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে গুজব অনেকটা কমেছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম স্ত্রীসহ অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সেলিম মাহমুদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জয়, পুতুল ও ববিসহ ৮ জনের নামে মামলার অনুমোদন পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৭৪৮ জন ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে ১০ জনের মৃত্যু ঢাকা জেলার আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্সসমূহ ২০২৬ সালের জন্য নবায়নের সময় নির্ধারণ ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশ ২০২৫’ এর খসড়া প্রকাশ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা দিলো ডিএমপি নিউজার্সির প্রথম নারী গভর্নর নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন শেরিল ভার্জিনিয়ার প্রথম নারী গভর্নর হয়ে ইতিহাস গড়লেন অ্যাবিগেল

সরকারের দায়িত্ব পালনের আগ্রহ কিংবা ইচ্ছা দেখতে পাচ্ছি না: আনু মুহাম্মদ

নিউজ ডেস্ক | মেট্রোটাইমসটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট : বুধবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫, ২:০৮ অপরাহ্ন

শিল্পকর্ম বিরোধী, সৃজনশীলতা বিরোধী; মানুষের মতপ্রকাশের যতগুলো মাধ্যম আছে, সবগুলোর মাধ্যমের ওপরে ‘আক্রমণ আসছে’ অভিযোগ করে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ছিল এগুলোকে ঠেকানো। কিন্তু সেটা করা হচ্ছে না। সরকারের ভূমিকা খুবই নিষ্ক্রিয় এবং যে দায়িত্ব তারা গ্রহণ করেছেন, সেই দায়িত্ব পালনের জন্য আগ্রহ কিংবা ইচ্ছা কোনোটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আয়োজনে ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৬ মাস: কেমন আছে দেশ ও শিক্ষাঙ্গন?’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন এই শিক্ষাবিদ।

অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সৃজনশীলতা-বিরোধী শক্তির জন্ম আমরা দেখতে পাচ্ছি। তাদের দাপট দেখতে পাচ্ছি। তাদের বিভিন্ন অজুহাতে সেটা লালনের গান হোক, নাটকের অনুষ্ঠান হোক, প্রদশর্নী হোক, শিল্পকর্ম হোক, ভাস্কর্য হোক; সবগুলোর ওপর আক্রমণ হচ্ছে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, ২০ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছে। তাদের চিকিৎসা, তাদের দায়দায়িত্ব রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত যথাযথভাবে নেয়নি। পাশাপাশি যে দায়িত্বগুলো তাদের পালন করার কথা, সেগুলো তারা পালন করছেন না। এটা আমাদের জন্য খুবই চিন্তার বিষয়। এই গণঅভ্যুত্থানের মূল আকাঙ্খা ছিল বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়া। কিন্তু কিছু গোষ্ঠীর দাপট আমরা দেখতে পাচ্ছি। যারা বৈষম্যবাদী রাজনীতি, মতাদর্শ, সংস্কৃতি, অর্থনীতির প্রতিনিধিত্ব করে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করা, অবস্থান নেওয়া সরকারের দায়িত্ব।’ শ্রেণি, লিঙ্গ, জাতি, ধর্মভিত্তিক যতো ধরনের বৈষম্য আছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়াকে  বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক দায়িত্ব মনে করে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষক দীপ্তি দত্ত, অলিউর সান এবং অধ্যাপক সৌমিত জয়দ্বীপ। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, অভূতপূর্ব জুলাই অভ্যুত্থান বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অব্যবস্থাপনা ও ব্যাধিগুলোকে চিহ্নিত ও শনাক্ত করে, যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে একটি সফল ও বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্রগঠনের সুযোগ আমাদের সামনে এনেছিল। দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা দুঃশাসনের পর যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য ও সংহতি, ঠিক তখন ট্যাগিংয়ের বিভেদমূলক রাজনীতিকে ব্যবহার করে দেশব্যাপী সহিংসতা, বল প্রয়োগ, মব-সন্ত্রাস, তথ্য গোপন ও কণ্ঠরোধ, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নেওয়াসহ বহুবিধ উপায়ে নতুন ধরনের স্বৈরতন্ত্রের আশঙ্কা রাষ্ট্রের ওপর চেপে বসেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন। তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম আমাদের আকাঙ্খাটা পূর্ণ হবে। কিন্তু আসলেই কী তা হচ্ছে? কেন শিক্ষকদের রাজপথে বসে থাকতে হবে? আমরা কিন্তু সচেতন। প্রয়োজনে আমরা আবার রাস্তায় আসবো।’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাসির আহমেদ বলেন, ‘আমরা বলতে চাচ্ছি, যারা মিথ্যা মামলা করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। মব সংস্কৃতি বাদ দিতে হবে। আমরা আইনের শাসন চাই। সবার অধিকার যাতে প্রতিষ্ঠিত হয় সেটাই আমরা চাই।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্তবর্তী সরকারের ৬ মাস পর্যবেক্ষণ করার পর দেশ ও শিক্ষাঙ্গনের প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রস্তাব ও দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো-

জুলাই হত্যাকাণ্ডের স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য বিচারিক প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা; রাষ্ট্রের সব স্তরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা; বিভেদমূলক রাজনীতির অবসান ঘটিয়ে, সব ধরনের মত ও বিশ্বাসের অধিকার প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে সক্রিয় ও শক্তিশালী ভূমিকা পালন করা; রাষ্ট্রের স্বার্থবিরোধী সব চুক্তি জনসম্মুখে প্রকাশ এবং পর্যায়ক্রমে বাতিল করা; গ্রেফতার এবং হেফাজতে নেওয়ার ক্ষেত্রে আইনানুগ প্রক্রিয়া যথাযথভাবে অনুসরণ করা এবং যেকোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করা; মব সংস্কৃতি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা; অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব ধরনের অনিয়মের সুষ্ঠু তদন্ত ও তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এছাড়া জুলাই জাগরণের স্পিরিটকে ধারণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনা সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করা; বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে উপাচার্য থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রশাসনিক পদে নিয়োগ প্রদানের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের অবাধ চলাচল ও মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করা এবং যেকোনো বিচ্যুতির ক্ষেত্রে জবাবদিহি নিশ্চিত করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সকল ফোরামগুলোকে গণতান্ত্রিক পন্থায় সক্রিয় করা, সন্ত্রাসী ও দখলদারদের তদন্ত সাপেক্ষে সাজা দেওয়া এবং শিক্ষার্থী রাজনীতি বন্ধের সকল পাঁয়তারা বন্ধ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সর্বপ্রভাবমুক্ত সার্চ কমিটি গঠন করা; এবং শিক্ষা-বাজেট বৃদ্ধি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিকে অগ্রাধিকার-প্রাপ্য খাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া।

সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক কামরুল হাসান মামুন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা, তাসনীম সিরাজ মাহবুব, অধ্যাপক কামাল চৌধুরী, অধ্যাপক কাজী মারুফ, অধ্যাপক স্বপ্ন আদনান, ড. সামিনা লুৎফা, ড. মোশাহিদা সুলতানা, ড. রুশাদ ফরিদী, ড. কাজলি শেহেরীন ইসলাম, মারজিয়া রহমান, লায়েকা বশীর, হানিউম মারিয়া, ড. ইসমাইল সাদী, রাইয়ান রাজী, শেহেরীন আতাউর খান প্রমুখ।-বাংলা ট্রিবিউন


এই ক্যাটাগরির আরও সংবাদ
এক ক্লিকে বিভাগের খবর