বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে অনাস্থা জানিয়ে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন ৮ পরিচালক। বুধবার (২৮ মে) যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছেন বিসিবি পরিচালকরা। বিসিবির একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফারুকের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া ৮ পরিচালক হলেন- নাজমুল আবেদীন ফাহিম, ফাহিম সিনহা, মো. সাইফুল আলম স্বপন চৌধুরী, মাহবুব উল আলম, ইফতেখার রহমান মিঠু, কাজী ইনাম আহমেদ, মো. মনজুর আলম ও মো. সালাহউদ্দিন চৌধুরী।
ফারুকের বিরুদ্ধে আট পরিচালকের অভিযোগ হলো- দায়িত্বপ্রাপ্তির সময় বোর্ডের কমিটিসমূহ পুনর্গঠনের কথা ছিল। ৫ মাস পর তিনি কমিটি পুনর্গঠন করেন। কিন্তু বোর্ড সভাপতির স্বেচ্ছাচারিতা ও একক আধিপত্যের কারণে পরিচালকরা স্বাভাবিক ও স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না।
পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে সভাপতির এককভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন। একের পর এক দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ ও স্বেচ্ছাচারিতায় বিসিবির অভ্যন্তরে অব্যবস্থাপনা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। দেশে ও বাইরে সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে ও বাংলাদেশ ক্রিকেটের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে চলেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে- বিভিন্ন পরিচালককে চেয়ারম্যান করে কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি স্বাধীন থাকে এবং সভাপতি কমিটির সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। কিন্তু বর্তমান সভাপতি হস্তক্ষেপের মাধ্যমে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন। পরিচালকরা বা কমিটি অনেক সময় সভাপতির সিদ্ধান্তের বিষয়ে কিছুই জানেন না। উদাহরণস্বরূপ- কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন পরিচালকরা। যা তারা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জেনেছেন।
চিঠিতে তারা উল্লেখ করেছেন- পতিত সরকারের সময় নিয়োগ পাওয়া অযোগ্য, দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অপসারণের কথা ছিল। কিন্তু সভাপতি তাদের আরও সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বহাল রেখেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলে অনিয়মে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিসিবিতে নিয়োগ দিয়েছেন ও অযোগ্যদের পদোন্নতি দিয়ে যোগ্য, সৎ ও কর্মঠদের কোণঠাসা করেছেন। পরিচালকরা দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ এবং গঠনতন্ত্র সংশোধন-পরিমার্জনের তাগিদ দিলেও কোন উদ্যোগ নেননি।
গতকাল রাতে ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাৎ করেন ফারুক আহমেদ। এ সময় ক্রীড়া উপদেষ্টা ফারুককে জানান, সরকার আর বিসিবি সভাপতি পদে তাকে রাখতে চাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে ভাবার জন্য দুই-একদিন সময় নিয়েছিলেন ফারুক।
তবে আজ সংবাদমাধ্যমে পদত্যাগ না করার কথা জানান ফারুক। দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে ফারুক বলেন, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি পদত্যাগ করবো না। আমাকে বলা হয়েছে, সরকার নাকি আমাকে আর বিসিবি সভাপতি হিসেবে রাখতে চাচ্ছে না। কিন্তু কেন রাখতে চাচ্ছে না সেটার কোনো কারণ তারা আমাকে বলেনি। বিনা কারণে তো আমি পদত্যাগ করতে পারি না।’
গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট-পরিবর্তনের পর থেকে বিসিবিতে আসে নতুন নেতৃত্ব। ফারুক এনএসসির কাউন্সিলর হিসেবে বিসিবির পরিচালক হন। এরপর ২১ আগস্ট পরিচালকদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হন। পরিচালকদের অনাস্থার কারণে এখন পদ হারানোর পথে ফারুক।
এ দিকে গুঞ্জন রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে বিসিবি সভাপতি করতে চায় সরকার। বিসিবির সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে আমিনুল বলেছিলেন, ‘আমাকে বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নিতে এখনো বলা হয়নি। ক্রীড়া উপদেষ্টার সঙ্গে বোর্ড সভাপতির সঙ্গে গতকালের সভায়ও আমি ছিলাম না। তবে ১০-১৫ দিন আগে আমার সঙ্গে উপদেষ্টার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তারা আমাকে কোনো একটা ভূমিকায় কিছু সময়ের জন্য বাংলাদেশের ক্রিকেটে চাচ্ছেন। আমিও তাতে রাজি হয়েছি।’