প্যারিসে ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পত্রিকা বিক্রি করছেন পাকিস্তানের আলী আকবর। ফরাসি সংস্কৃতিতে বড় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাকে এবার দেয়া হচ্ছে দেশের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সম্মাননা ‘অর্ডার অব মেরিট’।
আগামী মাসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ আলীর হাতে এ সম্মাননা তুলে দেবেন। এটি ফ্রান্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান। এরিমধ্যে আলী আকবরকে নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক কৌতূহল।
আলী প্রতিদিনের পত্রিকা বগলদাবা করে বেরিয়ে পড়েন। মুখে বলতে থাকেন দৈনিক পত্রিকার তরতাজা সব শিরোনাম। এভাবেই পত্রিকা পৌঁছে দেন পাঠকের হাতে। ৫০ বছরের বেশি সময় ধরে এ কাজ করছেন তিনি।

প্যারিসে তিনিই একমাত্র যিনি এখনও হাতে কাগজ নিয়ে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করে চলেছেন। মজার বিষয় হলো, প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রো নিজেও ছাত্রজীবনে আলী আকবরের কাছ থেকে পত্রিকা কিনতেন।
১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি থেকে ফ্রান্সে পাড়ি দেন আলী। সংবাদপত্র বিক্রিকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি বলেন, আমি যখন প্যারিসে পত্রিকার হকারি শুরু করি, তখন ৩৫ থেকে ৪০ জন এ কাজ করতেন। এখন আর কেউ নেই। আমি একাই রয়ে গেছি।
দিন বদলের স্রোতে ছাপা পত্রিকা ক্রমেই জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। সময়ের এই বাঁকবদলে পত্রিকার হকাররাও ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলেও আলী ধরে রাখেন তার পুরোনো পেশা।
নিবেদিতপ্রাণ পেশাজীবীকে তাই আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাতে যাচ্ছে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। আগামী মাসে তাকে দেওয়া হবে অর্ডার অব মেরিট যা ফ্রান্সের অন্যতম শীর্ষ বেসামরিক সম্মাননা।
কেতাদুরস্ত ফ্যাশনশিল্পের জন্য পরিচিত প্যারিসের সেইন্ট জার্মেই এলাকার ক্যাফেগুলো ঘুরে আলী আকবর এখন বিখ্যাত ফরাসি পত্রিকা লা মঁদের মাত্র ৩০ কপি বিক্রি করতে পারেন।
অথচ একসময় দৃশ্যপট ছিল পুরো উল্টো। আলী আকবর জানান, ইন্টারনেট জমানার আগে পত্রিকার সন্ধ্যাকালীন মুদ্রণের পর প্রথম ঘণ্টায় প্রায় ৮০ কপি বিক্রি হয়ে যেত।
আলী আকবর বলেন, আমি খুবই হতাশ। এখন সবকিছু ডিজিটাল মাধ্যমে চলে। মানুষ শুধু নিজের মুঠোফোন দেখতে চায়। আগের দিনে পাঠকেরা দৈনিক পত্রিকা কেনার জন্য আমার চারপাশে ভিড় করতেন। আর এখন এক কপি পত্রিকা বিক্রি করতে আমাকেই পাঠকের পিছে পিছে ছুটতে হয়।
এত চ্যালেঞ্জের পরও ৭২ বছর বয়সী আলী আকবর তার বর্তমান পেশায় খুশি। কারণ শুধুমাত্র আনন্দের জন্যই এই কাজটি করে যান তিনি। -একাত্তর