আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে যারা এখন মাঠে আছে কেবল তারা নয়, দেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ।
তিনি বলেছেন, ‘আমরা কঠিন ও অস্বাভাবিক সময় অতিবাহিত করছি। কারণ শেখ হাসিনা পালিয়ে গেছে, তাদের প্রেতাত্মারা এখনো আছে। বাংলাদেশে তাদের রাজত্ব কায়েম করার জন্য তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না।’
তারা এখনো ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু তাদের ষড়যন্ত্র সফল হবে না। দুর্ভাগ্য আমরা যাদের দায়িত্ব দিয়েছি, আমাদের দেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য, তারা সঠিকভাবে এখনো কাজটি করতে পারছে না। ফলে মাঝে মাঝেই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে, তাদের আরও শক্তিশালী করার সুযোগ করে দিচ্ছে। আজকে এখানে সমাবেশ হচ্ছে, আরেকটি হচ্ছে নিউমার্কেটে এবং আরেকটি হচ্ছে ঢাকায়। দাবিটা কী? আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে তাই না? আমরা মাঠে যারা আছি তারা শুধু নয়, বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে দেখতে চায় না। কারণ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের মানুষের ওপর নির্যাতন করেছে। গণতন্ত্র ধ্বংস, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ও বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে।
আজ শনিবার বিকেলে বিএনপির তিন সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবকদল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক পলোগ্রাউন্ড মাঠে তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে মহান পথপ্রদর্শক ও দার্শনিক হিসেবে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের মাটি থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং মুক্ত অর্থনীতির সূচনা করেছিলেন। দেশের পোশাক শিল্প ও বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির মতো গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক খাতের ভিত্তিও জিয়াউর রহমান তৈরি করেছিলেন।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভূমিকার কথা উল্লেখ করে বিএনপির মহসচিব বলেন, ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাহাদাতের পরে গণতন্ত্রের জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নয়টা বছর পথে পথে, মাঠে ঘাটে, ঘরে ঘরে ঘুরে এরশাদকে পরাজিত করে গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এনেছিলেন। তিনি আমাদেরকে পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি দিয়েছিলেন এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরির জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাও আমাদের সংবিধানে নিয়ে এসেছিলেন।’
তরুণদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘মাথা ঠান্ডা রেখে, সজাগ দৃষ্টিতে সব চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। আমরা সত্যিকার অর্থে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ ও সম্প্রীতির বাংলাদেশ দেখতে চাই, যেখানে বাংলাদেশের পতাকা বিশ্বজুড়ে সম্মানের সাথে উড়বে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু হয়েছে, এটা কেউ বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। গণতন্ত্রের পথ কেউ যাতে রুদ্ধ করতে না পারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে এগিয়ে যাবো, কারো উস্কানিতে পা দেওয়া যাবে না। এটা তারেক রহমানের সিদ্ধান্ত। আমরা রাজনীতিতে নতুন সংস্কৃতি সৃষ্টি করতে চাই, সহনশীল থাকতে হবে সবাইকে।’
আমীর খসরু বলেন, ‘আজকে এখানে তামিম ইকবালকে দেখে বলতে ইচ্ছে হচ্ছে চট্টগ্রামের তরুণরা আজকে ছক্কা মেরে দিয়েছে। এই তরুণরা ফ্যাসিস্ট হাসিনা হঠানোর মূল শক্তি। ওয়াসিম আকরামের জীবন দিয়ে এ আন্দোলন সফল করেছে। সেদিন ছাত্রদল যুবদল স্বেচ্ছাসেবকদল বুক পেতে দিয়েছে গুলির সামনে। গণতন্ত্র, মানুষের মালিকানাসহ সব অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য লড়াই করেছে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন নাসিরের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাৎ হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের উপদেষ্টা মন্ডলির সদস্য ড. মাহাদী আমীন, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশিদ, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মো. এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান নাজিম, সাবেক সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ।