সাকিব আল হাসান আর বিতর্ক যেন কাঁঠালের আঠা। জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে থেকেই মাঠ ও মাঠের বাইরে নানান ধরনের বিতর্কের মাঝে ছিলেন সাকিব আল হাসান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নীরব ভূমিকা পালন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য হওয়ায় একাধিক মামলায় জড়িয়েছে তাঁর নাম। বর্তমানে নিরাপত্তাজনিত কারণে দেশে আসতে পারছেন না। অবশেষে সব ঘটনা নিয়ে দেশের একটি ইংরেজি দৈনিক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন,তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে সেসব থেকে নিজের নাম মুছতে যে কোনও ধরনের তদন্তে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত তিনি।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সবশেষ তিনি দেশের হয়ে খেলেছেন কানপুর টেস্টে। দেশ থেকেই টেস্টে বিদায় নেয়ার কথা ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে। কিন্তু সেই স্বপ্ন পুরণ হয়নি তার। দুবাই এসেও দেশের জন্য বিমানে উঠতে পারেননি। জনরোষ তার বিপক্ষে, কারণ জুলাই অভ্যুত্থানের সময় তিনি বৈষ্যম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ নেননি। একের পর এক লাশ পড়লেও ছিলেন নির্বিকার। এখনো তিনি অনুতপ্ত নন। তিনি বলেছেন, তার রাজনীতিতে আসা ভুল ছিল না। এখনো নির্বাচন করলে জিতবেন। শুধু তাই নয়, স্পষ্ট করেই বলেছেন ক্ষমতা চীরস্থায়ী নয়। দেশের একটি ইংরেজি দৈনিককে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে যে-ই ক্ষমতায় আসুক, তারা চিরকাল থাকবে না। এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তাই,সিস্টেমটা ঠিক করতে হলে সবাইকে একসাথে আসতে হবে। আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম শুধুমাত্র মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করার লক্ষ্য নিয়ে। অন্য কোনো লাভের জন্য নয়। উদ্দেশ্য ছিল একদম পরিষ্কার। গত ১৮ বছর নাকি শেষের ৬ মাস, কোনটা দেখে আমাকে বিচার করবেন, তা আপনাদের ইচ্ছা।’
সাকিব আল হাসানের দাবি ১৮ বছর তিনি বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন। সেটিই বিবেচনায় নেয়া উচিত ছিল জনগণের। কারণ তিনি সংসদ সদস্য ছিলেন ৬ মাস মাত্র। সাকিব বলেন, ‘আমি মনে করি, বাংলাদেশের হয়ে খেলার সুযোগটা আমার প্রাপ্য এবং বেশির ভাগ মানুষই চায় আমি দেশের হয়ে খেলে অবসর নিই এবং আরও কিছুদিন খেলা চালিয়ে যাই। আমার বিশ্বাস, আরও এক-দুই বছর খেলতে পারব। হ্যাঁ, আমি সংসদ সদস্য ছিলাম, কিন্তু এখন তো আর নেই এবং কোনও দলের কোনও রাজনৈতিক পদেও নেই। আমি এখনও বাংলাদেশের হয়ে খেলে ভালো ভাবে ক্যারিয়ার শেষ করতে চাই। যদি সুযোগ থাকে আমি এক সিরিজ, দুই সিরিজ নাকি আরও এক বছর খেলব, সেই পরিকল্পনা করতে চাই।’
রাজনীতিতে এসে ভুল করেছেন এমনটাও মানতে নারাজ সাকিব। শুধু তাই নয় এখনো নির্বাচন করলে নিজ আসনে জিতবেন বলেও বিশ্বাস তার। সাকিব বলেছেন, ‘রাজনীতিতে আসা ভুল কিনা, এটা নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তারা বেশিরভাগই মাগুরার ভোটার নন। মাগুরার মানুষের ভাবনা আলাদা। তারা বিশ্বাস করে আমি কিছু করতে পারব। সুতরাং, কে কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না।’ সাকিব জানিয়েছেন, শুধুমাত্র জনপ্রিয়তার জন্য নয়, মানুষের জন্য কাজ করার ইচ্ছাই তাকে টেনে এনেছিল রাজনীতির মঞ্চে। কিন্তু সময়, পরিস্থিতি এবং সুযোগের অভাবে সেটা আর সম্ভব হয়নি। তবে সাকিবের ভাষ্য অনুযায়ী, মাগুরার মানুষ তাকে এখনও বিশ্বাস করে, আর সেই বিশ্বাসই তার সবচেয়ে বড় শক্তি।