বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘ভোট চাইতে আসিনি; দেশ, মাটি ও মানুষের জন্য প্রয়োজন হলে আবার ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে হবে, এই কথা বলতে এসেছি। আওয়ামী লীগের নৌকায় ফিরে যেতে না চাইলে ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ে ৫ আগস্টের মতো ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে।’
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ মাঠে উপজেলা বিএনপি আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেকে বলে বিএনপি আন্দোলন করে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারেনি। কিন্তু প্রকৃত সত্য হলো বিএনপি ১৫ বছর আন্দোলন করেছে বলেই শেখ হাসিনা পতনের আন্দোলন সফল হয়েছে। আমরা ১৫ বছর লড়াই করেছি বলেই ছাত্র-জনতা হাসিনাকে বিদায় করতে পেরেছে। ছাত্র-জনতা সাহস করে দাঁড়িয়েছিল বলে তাদের সাধুবাদ জানাই। তবে এর পেছনে ছিল বিএনপির ১৫ বছরের ত্যাগ ও সংগ্রাম। তারেক জিয়াকে দেশত্যাগে বাধ্য করা, খালেদা জিয়াকে কারাগারে হত্যার ষড়যন্ত্র এবং নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কারাগারে রাখার কথা কারও অজানা নয়। আমার বিরুদ্ধে ১২২টি মামলা এবং ১১ বার কারাগারে যেতে হয়েছে। এখনও স্বৈরাচার আমলের মামলা নিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আদালতে দৌড়াদৌড়ি করতে হয়। বিএনপির ১৫ বছরের আন্দোলন ও ত্যাগের ইতিহাস সবার জানা।’
শেখ হাসিনা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এ অবস্থায় সব ষড়যন্ত্র ও উগ্রবাদকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা এবং প্রতিহত করতে হবে।’
শেখ হাসিনার উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘পালাই ছো ভাই ভালো হইছে, রক্ষা করছো। ভারতে বসে তুমি বিভিন্ন দেশের বাঙালিদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছো। দুঃখজনকভাবে এ কথা বলার চেষ্টা করছো, আমাদের এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের ভাইদের ওপর নাকি নির্যাতন হচ্ছে, অত্যাচার হচ্ছে।’ মির্জা ফখরুল জনসভায় অংশ নেওয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের কাছে জানতে চান, ‘আপনাদের ওপর কোনও অত্যাচার-নির্যাতন হয়েছে? বাড়ি দখল করে নিয়েছে? সে সময় জবাবে তারা বলেন, না, কোনও অত্যাচার হয়নি।’ এটাই হচ্ছে বাস্তবতা বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশে কোনও সাম্প্রদায়িকতা নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে সাম্প্রদায়িকতা হচ্ছে, এটা আমরা মানতে রাজি নই। খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাংলাদেশে কোনও সাম্প্রদায়িকতা নেই। আমাদের মতো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ বিশ্বের কোনও দেশে নেই, পাশের দেশ ভারতেও নেই। শুধু বাংলাদেশে সেই সম্প্রীতি আছে।’
দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য দায়িত্বশীলদের আরও সচেতন হয়ে কথা বলার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে অনেক কিছু শুরু হয়েছে। আমাদের কিছু কিছু মানুষ এখন বিভিন্ন রকম কথা বলছে, এই কথাগুলো বলা বন্ধ করেন। বিশেষ করে যারা দায়িত্বশীল জায়গায় আছেন, তারা ভুল কথা বলে, উত্তেজনামূলক কথা বলে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দেশের মানুষকে আর বিভ্রান্ত করবেন না। অনেক হয়েছে, আমরা অনেক কষ্ট করেছি, অনেক রক্ত দিয়েছি এবং আমরা অনেক কষ্ট ভোগ করেছি। দেশের মানুষ অনেক নির্যাতন সহ্য করেছে। এবার শান্তি চায় সবাই। আমরা নির্বাচন চাই, যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করতে চাই, ঘুষ-দুর্নীতি-দখলবাজি বন্ধ করতে চাই।’
দলের সংস্কার প্রস্তাবের কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০১৬ সালে “ভিশন বাংলাদেশ টুয়েন্টি-থার্টি” দিয়ে সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছিলেন। সে সময় তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য আনতে হবে। দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ হলে ক্ষমতার ভারসাম্য হবে। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন। সেই ৩১ দফা কী, সংস্কার প্রস্তাব। এই সংস্কারটা আমরা চাই।’
উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য দেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি ওবায়দুল্লাহ মাসুদ, সাধারণ সম্পাদক মির্জা ফয়সাল আমিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পয়গাম আলী, দফতর সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরীফ ও সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাহবুব হোসেন তুহিন প্রমুখ।-বাংলা ত্রিবিউন