ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে আগামী মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে বাধা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য আব্বাসসহ প্রায় ৮০ জন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তার ভিসা বাতিল করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনি নেতারা শান্তি প্রক্রিয়া ব্যাহত করছেন এবং ‘কাল্পনিক একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের একতরফা স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা করছেন।’
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আসা সকল দেশের প্রতিনিধিদের যাতায়াত সহজ করে থাকে। তাই এই সিদ্ধান্তটিকে অস্বাভাবিক বলেই মনে করা হচ্ছে। ইসরায়েল ইতোমধ্যে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে।
এ নিষেধাজ্ঞা এমন সময়ে এলো যখন ফ্রান্স আগামী অধিবেশনে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার আন্তর্জাতিক উদ্যোগের নেতৃত্ব দিচ্ছে। এর বিরোধিতা করছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ফিলিস্তিনি জাতিসংঘ প্রতিনিধি রিয়াদ মনসুর এর আগে জানিয়েছিলেন, আব্বাস রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের বৈঠকে যোগ দেবেন। কিন্তু পরে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার (পিএলও) প্রায় ৮০ জন কর্মকর্তা ভিসা বাতিলের কারণে এ অধিবেশনে অংশ নিতে পারবেন না।
রুবিও বলেন, নিউইয়র্কে ফিলিস্তিন মিশনের প্রতিনিধিরা জাতিসংঘ সদরদপ্তর চুক্তি অনুযায়ী বৈঠকে অংশ নিতে পারবেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই ভিসা প্রত্যাখ্যান ওই চুক্তির সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না, তা স্পষ্ট নয়। চুক্তিতে বলা হয়েছে, বিদেশি প্রতিনিধিদের উপস্থিতি কোনো অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না।
আব্বাসের দপ্তর মার্কিন সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও জাতিসংঘ সদরদপ্তর চুক্তির স্পষ্ট পরিপন্থী। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সাআর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আব্বাস একইসঙ্গে ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থার প্রধান, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফিলিস্তিনিদের প্রতিনিধিত্ব করে। ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ পিএলও-কে ফিলিস্তিনি জনগণের ‘একক বৈধ প্রতিনিধি” হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং পর্যবেক্ষক মর্যাদা প্রদান করে। ২০১২ সালে ফিলিস্তিনকে ‘স্থায়ী পর্যবেক্ষক রাষ্ট্র’ হিসেবে উন্নীত করা হয়।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সবসময় দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের বিরোধিতা করে এসেছেন। তার মতে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে ‘হামাসের সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা।’
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলে প্রায় ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জন অপহৃত হন। এরপর থেকে ইসরায়েলি অভিযানে গাজায় ৬৩ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি।
রুবিও শুক্রবার বলেন, ‘পিএলও এবং পিএ-কে শান্তির অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করতে হলে প্রথমে তাদের সন্ত্রাসবাদ ত্যাগ করতে হবে—অক্টোবর ৭-এর হত্যাযজ্ঞসহ। এছাড়া, শিক্ষা ব্যবস্থায় সন্ত্রাসবাদে উসকানি বন্ধ করতে হবে এবং আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে একতরফা মামলা করার চেষ্টা বাদ দিতে হবে।’
জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিচ জানিয়েছেন, তারা বিষয়টি নিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করছেন এবং দ্রুত সমাধান আশা করছেন।
আগামী অধিবেশনে ফ্রান্স ও সৌদি আরব দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান নিয়ে বৈঠক আয়োজন করবে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। বর্তমানে জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
তবে সীমান্ত চিহ্নিত না থাকা, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ এবং গাজায় একই পরিকল্পনার কারণে এই স্বীকৃতি বাস্তবে তেমন কোনো পরিবর্তন আনবে না বলে বিশ্লেষকদের মত।খবর বিবিসির।