ইয়েমেনে হাউছি বিদ্রোহীদের ওপর শক্তিশালী বিমান হামলা চালানোর কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এর কারণ হিসেবে তিনি লোহিত সাগরে চলাচলকারী জাহাজের ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীটির আক্রমণের কথা বলেছেন। ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে লিখেছেন, ইরানের অর্থায়নে হাউছিরা মার্কিন বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে এবং আমাদের সেনা ও মিত্রদের নিশানা করেছে। তাদের জলদস্যুতা, সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি করেছে এবং জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলেছে। হাউছি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৩২ জন বেসামরিক মানুষ নিহত ও ১০১ জন আহত হয়েছেন। গাজায় ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় সাগরে জাহাজ নিশানা করে আক্রমণ চালিয়ে আসছিল হাউছি। গোষ্ঠীটি এখন বলেছে, তাদের বাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দেবে।-বিবিসি ও রয়টার্স
এ দিকে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্রকে ইয়েমেনের হাউছিদের ওপর হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ল্যাভরভ এ বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সাথে টেলিফোনে কথা বলেছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধির যুক্তির জবাবে, সের্গেই ল্যাভরভ বলেছিলেন, অবিলম্বে শক্তির ব্যবহার বন্ধ হওয়া জরুরি এবং রক্তপাত রোধ করতে সব পক্ষের রাজনৈতিক সংলাপে যুক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সৌদি আরবের সীমান্তবর্তী বিদ্রোহীদের শক্ত ঘাঁটি সানা ও উত্তরাঞ্চলীয় সাদাহ প্রদেশে শনিবার সন্ধ্যায় বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে হাউছিরা। সাদাহে বিদ্রোহীদের শক্তিশালী ঘাঁটি রয়েছে। ইরান সমর্থিত এ বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে শত্রু হিসেবে দেখে ইসরাইল। ওই সশস্ত্র গোষ্ঠী সানা ও ইয়েমেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে। তবে দেশটির সেই সরকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়।
কয়েকটি ছবিতে সানার বিমানবন্দর এলাকায় কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী দেখা গেছে, যার মধ্যে একটি সামরিক স্থাপনাও রয়েছে। তবে সেসব ছবি যাচাই করা সম্ভব হয়নি। হাউছিরা এক বিবৃতিতে ইয়েমেনের রাজধানী সানায় আবাসিক এলাকা নিশানা করে ‘আক্রোশমূলক’ আগ্রাসনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে দোষারোপ করেছে। যদিও শনিবারের মার্কিন হামলায় যুক্তরাজ্য অংশ নেয়নি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তারা নিয়মিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে জ্বালানি সহায়তা দিচ্ছে।
হাউছিদের হামলাকে সহ্য করা হবে না বলে মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত আমরা অপ্রতিরোধ্য প্রাণক্ষয়ী শক্তি ব্যবহার করে যাবো।’ হাউছিদের ভাষ্য, গাজায় ইসরাইল ও হামাসের যুদ্ধে তারা ফিলিস্তিনিদের সমর্থনে কাজ করছে। তারা কেবল ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্য সংশ্লিষ্ট জাহাজকে নিশানা করছে। হাউছিরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে কয়েক ডজন বাণিজ্যিক জাহাজকে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও ছোট নৌকায় করে হামলা চালিয়েছে। তারা দু’টি জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে, জব্দ করেছে আরেকটি জাহাজ; চার ক্রুকে মেরে ফেলেছে।
বাণিজ্যিক জাহাজের সুরক্ষায় পশ্চিমা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন কিংবা হাউছিদের সামরিক স্থাপনা নিশানা করে একাধিক মার্কিন ও ব্রিটিশ হামলাতেও দমেনি বিদ্রোহী এ গোষ্ঠী। ইসরাইলও গত জুলাই থেকে হাউছিদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। ৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছোড়ার প্রতিশোধ হিসেবে এসব হামলা চালানোর কথা বলছে ইহুদি দেশটি। তাদের ভাষ্য, ওইসব অস্ত্র ছোড়া হয়েছিল ইয়েমেন থেকে, যার বেশির ভাগই ভূপাতিত করা হয়েছে।
হাউছির আক্রমণের কারণে শীর্ষ শিপিং কোম্পানিগুলো লোহিত সাগর ব্যবহার বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। বৈশ্বিক সমুদ্র বাণিজ্যে ওই পথের হিস্যা ১৫ শতাংশের মত। এর বিকল্প হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকা ঘুরে দীর্ঘ পথ ব্যবহার করতে হচ্ছে। ট্রাম্প বলেছেন, ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে লোহিত সাগরকে যুক্ত করা সুয়েজখাল ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকাবাহী সবশেষ জাহাজ গেছে এক বছরেরও বেশি সময় আগে।
আর মাস চারেক আগে একটি মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ পূর্ব আফ্রিকা ও আরব উপদ্বীপের জলসীমা দিয়ে গেছে। বিবিসি লিখেছে, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যকার দ্রুততম সামুদ্রিক পথ হচ্ছে এই সুয়েজ খাল। তেল ও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনের জন্যও এ পথ গুরুত্বপূর্ণ। সরাসরি হাউছিদের উদ্দেশে ট্রাম্প লিখেছেন, যদি তারা না থামে, ‘এমন নরকযন্ত্রণা নেমে আসবে’ যা তারা আগে কখনো দেখেনি।
তবে হাউছিরা তাদের অবস্থানে অটল থাকার কথা জানিয়ে বলেছে, এই আগ্রাসনের কারণে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তাদের সমর্থন কমবে না। ‘এ আগ্রাসন বিনা জবাবে পার পাবে না। আমাদের ইয়েমেনি সশস্ত্রবাহিনী আরো শক্তি বৃদ্ধি করে জবাব দিতে প্রস্তুত রয়েছে।’